১২.৪.১ আইপিএস এবং ইউপিএস
আমরা আমাদের দৈনন্দিন এবং কর্মজীবনে বিদ্যুতের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল এবং অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সাপ্লাই বন্ধ হলে আমাদের সব কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সময়েই তখন আমরা সাময়িকভাবে ভিন্ন বিদ্যুৎ সাপ্লাই ব্যবহার করি। ঘরের লাইট ফ্যানের জন্য এই ভিন্ন বিদ্যুৎ সাপ্লাই চালু করার জন্য দুই এক সেকেন্ড দেরি হলে আমাদের তেমন সমস্যা হয় না কিন্তু কম্পিউটার এবং এ ধরনের যন্ত্রপাতির বেলায় বিদ্যুৎ সাপ্লাই হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেলে আমরা বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে যাই। কম্পিউটারের তথ্য নষ্ট হতে পারে, এমন কী তার যন্ত্রপাতির ক্ষতি হতে পারে।
মূল বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হওয়ার পর ভিন্ন সাপ্লাই দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার প্রক্রিয়াটি কত দ্রুত করা যায় তার উপর নির্ভর করে আইপিএস এবং ইউপিএস (চিত্র ১২.১০) তৈরি করা হয়েছে।
মূল এসি লাইন
ব্যাটারি চার্জার
আউটপুট
কন্ট্রোলার
ব্যাটারি
ইনভার্টার
চিত্র ১২-১০: আইপিএস / ইউপিএস
বাসার লাইট ফ্যান একটু খানি দেরি করে চালু হলেও ক্ষতি নেই বলে সেখানে আইপিএস ব্যবহার করা হয়। এটি চালু হতে এক দুই সেকেন্ড সমর নের এবং সাধারণত বাসার গৃহস্থালি কাজে অর্থাৎ লাইট ফ্যান চালু করার কাজে ব্যবহার করা হয়। কাজেই আইপিএস মোটামুটি বেশ অনেকক্ষণ যথেষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে।ডেস্কটপ কম্পিউটার কিংবা এরকম সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতির বেলায় ইউপিএস ব্যবহার করা হয়। কারণ বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হবার দশ মিলিসেকেন্ডের ভেতর ইউপিএস বিদ্যুৎ প্রবাহ নিশ্চিত করতে পারে। কাজেই কম্পিউটারের বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হয় না। ইউপিএস এর বিদ্যুৎ প্রবাহ করার ক্ষমতা কম, সাধারণত কম্পিউটারের কাজকর্মগুলো গুছিয়ে নিয়ে, প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো সেভ করে, কম্পিউটারটি বন্ধ করে দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। ১২.১০ ছবিতে আইপিএস কিংবা ইউপিএসের কার্যপদ্ধতি দেখানো হলো। মূল বিদ্যুৎ প্রবাহ যখন চালু থাকে, তখন আইপিএস কিংবা ইউপিএসের ব্যাটারিগুলো চার্জ করা হতে থাকে। হঠাৎ করে মূল বিদ্যুৎ এবং সুইচটি মূল সাপ্লাই থেকে সরিয়ে ব্যাটারির সার্কিটের সাথে সংযুক্ত করে দেয়। ব্যাটারি থেকে ডিসি সাপ্লাই পাওয়া যায় বলে ইনভার্টার দিয়ে আগে এসি করে নিতে হয়। যখন মূল সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় সেই মুহূর্তে কন্ট্রোল সার্কিট ইনভার্টারের সার্কিটও চালু করে দেয়।
১২.৪.২ তড়িতের সিস্টেম লস
আমরা জানি, দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত পাওয়ার প্লান্টগুলোতে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করে। এই বিদ্যুৎকে প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতে হয়। বিদ্যুৎ বিতরণ করার জন্য প্রথমে বিভিন্ন এলাকার সাব-স্টেশনে পাঠানো হয়। সাব-স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ-ব্যবস্থা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ শক্তিকে একেবারে গ্রাহক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিদ্যুৎ শক্তিকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিতরণ করার জন্য যে পরিবাহী তার ব্যবহার করা হয়, কম হলেও তাদের এক ধরনের রোধ থাকে। একটা রোধের (R) ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ (1) হলে সবসময়েই (I2R) তাপ উৎপন্ন হয় এবং সেটি বিদ্যুৎ শক্তির লস বা ক্ষয়। এই লসকে বলা হয় সিস্টেম লস। তোমরা এর মাঝে জেনে গেছ যে একটা নির্দিষ্ট বিদ্যুৎ শক্তির জন্য যদি উচ্চ ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় তাহলে রোধজনিত তাপশক্তি হিসেবে লস কমে যায়। সে জন্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা হয় সেটিকে স্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার দিয়ে উচ্চ ভোল্টেজে রূপান্তর করা হয়। গ্রাহকদের ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ শক্তিকে বিতরণ করার আগে স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার ব্যবহার করে সেটিকে আবার ব্যবহারযোগ্য ভোল্টেজে নামিয়ে আনা হয়।
১২.৪.৩ লোড শেডিং
প্রত্যেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করে এবং সবগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়। আগেই বলা হয়েছে— এই বিদ্যুৎ স্থানীয় সাব-স্টেশন (বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র)— এর মাধ্যমে গ্রাহকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন এলাকার চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় গ্রিড বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কোনো এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা যদি উৎপাদন থেকে বেশি হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে না। তখন বাধ্য হয়ে সাব-স্টেশনগুলো এক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য অন্য একটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। এই প্রক্রিয়াটার নাম লোড শেডিং। সাব-স্টেশন যখন আবার প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ পায় তখন সেই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। যদি একনাগাড়ে কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়, তখন গ্রাহক পর্যায়ে লোডশেডিংকে সহনীয় করার জন্য কর্তৃপক্ষ চক্রাকারে বিভিন্ন জায়গা আলাদা আলাদা সময়ে লোডশেডিং করে থাকে।
Read more